অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো

মনে পড়েছে ? আমি সেই মেয়েটি। ১৯৭৯ সালের এস.এস.সি পরীক্ষায় ঘিওর দুর্গা নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের দোতালায় ৭ নম্বর বেঞ্চের পরীক্ষার্থী। যার রোল ঘিওর, নম্বর ম ৫০০৮০, বিভাগ বিজ্ঞান।
দৌলতপুর প্রমোদা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের বরাবর সব শ্রেণিতে প্রথম হওয়া মেয়েটি ভোলেনি তার সহপাঠী ফারুক, শফিক, শওকত আওয়াল,মমতাজ, নার্গিস, বুলবুলি আরো অনেক কে এবং সেই সাথে ঘিওরের বন্ধুপ্রতিম তাপস, বিকাশ আর রমেনকে তো নয়-ই। এবার বন্ধুত্বের পাশাপাশি রমেনের প্রতি অতিরিক্ত যোগ হলো হাদ্যিক কৃতজ্ঞতা। আজ দীর্ঘ ৩৬ বছর পর খুঁজে ফিরি পুরনো এ্যালবাম, নস্টালজিয়ায় মন হয় আছন্ন। কী এক অনাবিল আনন্দ ! অতীত বর্তমানের মাঝে এতদিন ছিল শুধুই স্মৃতির সাগর, অবগাহনে কুল কিনারা বিহীন অতল পাথার। রচিত হলো ঐকান্তিক সেতুবন্ধন। ‘১৯৭৯’ ঘিওরকে ঘিরে এক অমলিন স্মৃতি খাতা।
পরীক্ষা শুরুর পূর্বের দিন বাবার সাথে (বাবা -বৃন্দাবন চন্দ্র মণ্ডল তৎকালীন প্রধান শিক্ষক দৌলতপুর পি.এস. উচ্চ বিদ্যালয়) আমরা দুই বোন ঘিওর এলাম। শ্রদ্ধেয় শচীন মামা (বাবু শচীন মিএ) আমাদেরকে এক বাড়িতে ( বাবু সন্তোষ ঘোষের বাড়ি) লজিং রাখার জন্য নিয়ে গেলেন। দুঃখের বিষয় আমরা স্ েবাড়িতে গিয়ে বসে থাকলাম কিন্তু বাড়ির কোন লোক একটু বের হয়ে আমাদের সাথে কথা পর্য়ন্ত বললেন না, খু-উ-ব কষ্ট পেলাম। ভাবলাম এতবড় ঘিওরে আমাদের একটু জায়গা হলো না। দেখলাম মামাও একটু বিব্রত বোধ করছেন। একটু পরে তিনি আমাদেরকে নিয়ে গেলেন ঘিওরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ভবানী সাহার বাড়িতে। (বিকাশ তাপসদের বাড়ি)। এ বাড়ির লোকজন অত্যন্ত আপনজন আমার।
পরীক্ষা কেন্দ্রে যথারীতি ভালো পরীক্ষার্থী হিসেবে সুনাম ছিল আমার। অংক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেল। মাঝের সময়টিতে অর্থাৎ ২৫ বোশেখ আমার সহোদরা আমার সহপাঠী আমার মেঝদির ( বীণা পাণি মণ্ডল) বিয়ে হয়ে গেল। তারপর আবার পরীক্ষা।
‘ঘিওর আমার অনেক স্মৃতির ঘিওর। ‘ঘিওরকে ভোলা যায় না- ভোলা যায় না ঘিওরের কিছু মানুষকে যারা আমার স্মৃতি পটে প্রোজ্জ্বল।
বিশ্বায়নের যুগে আমরা আবার যুগলবন্দী এই ঘিওরে। যারা করে দিল এই মোহনীয় অমোঘ সুযোগ তাদের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই আমার।
আবারও তোমরা হলে আমার প্রাণের দোসর।
প্রফেসর শীলা মণ্ডল, অধ্যক্ষ, চরভদ্রাসন সরকারি কলেজ, ফরিদপুর।