ওরা কেন শাস্তি পাবে, অন্যায়টা কোথায়?

রাজশাহীর গভর্মেন্ট কলেজে আমাদের সময় কোন ইউনিফর্ম ছিলো না। এখন আছে কিনা জানিনা। রঙচটা জিন্সের সাথে হাই এঙ্কেল কের্ডস আর হাতা গোটানো বুকখোলা শার্ট। পিছনের পকেটে ভাঁজকরা দুটো খাতা। তাতেই ৫/৬টা ক্লাসের নোটস। অধিকাংশ সময়ই এই ছিলো ড্রেসকোড। শুকনো হাড়গিলে শরীরের সাথে মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুল, গলায় চেন আর পকেটে ইকোনো বলপেন্র সাথে ম্যাগগাইভার চাকু। এইতো ছিলাম তখন আমি। তো সেই আমিই কলেজ ফার্স্ট ইয়ারে প্রেমে পড়লাম। পরিকল্পনাহীন এক আকস্মিক পদক্ষেপ! এক বন্ধুর মধ্যস্থতায় ক্লাসেরই বড় বড় চোখওয়ালা শ্যামলা রঙা পাতলা গড়নের এক মেয়ে। সেতো আর মোবাইলের যুগ নয় বাপু, প্রেমপত্র লেখার জন্য বিশেষ নোটপ্যাড পাওয়া যেত তখন। হাল্কা গোলাপী রঙের হার্টের জলছাপ দেয়া লাইনটানা কাগজ, সাথে মিষ্টি একটা গন্ধ ফ্রি! বেশ দামী। তার অনেকগুলোই দলাপাকিয়ে ফেলে দিতে হয়েছে কাঁটাকুটির কারণে। অল্পকিছুই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছিলো।
এরপর এগারো বছরের প্রেম পর্ব আর একুশ বছরের দাম্পত্যজীবনের পর আমার নিজের ঘরেই এখন সতেরো বছরের এক সন্তান! মাঝে মাঝে ছেলের দিকে তাকিয়ে ভাবি, ও যদি এখন কোনও মেয়ের প্রতি দূর্বল হয় তবে কি আমি তাকে শাসন করবো? কোন অধিকারে? কোন যুক্তিতে? আমি কি আমার বত্রিশ বছর আগের সেই ঘটনায় অনুতপ্ত? মোটেই না! একজন মানব কিশোরের রঙিন দুনিয়ায় একজন মানব কিশোরীর প্রতি বিশেষ কিছু আবেগ সৃষ্টি হওয়া, সেই আবেগের বহুমাত্রিক প্রকাশ পাওয়া… এ তো মানব জাতির মৌলিক বৈশিষ্ট! এর মধ্যে যেমন মানবতা আছে, প্রেম-ভালোবাসা আছে তেমনি আছে সৌন্দর্য্যবোধ, সংবেদনশীলতা আর সৃষ্টিশীলতার অঙ্কুর। আর আছে অসম্ভবকে তুচ্ছ করার অদম্য প্রেরনা। এরমধ্যে অন্যায়টা কোথায়?
বত্রিশ বছর আগে আমার নিজের করা কর্মের পুনরাবৃত্তি করে এখন যখন কেউ শাস্তি পায়, তখন চিন্তা করি, আদতে আমরা এই সময়ে কতটুকু এগিয়েছি! নাকি মেনে নেব এ সমাজে গণধর্ষক, চাপাতি খুনি আর ব্যাংক ডাকাতরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে আর কয়েকজন কিশোর-কিশোরী স্রেফ প্রেম করার অপরাধে শাস্তি পাবে? তাদের প্রেমের প্রকাশ, চিন্তার গতিধারা ভিন্ন এবং সেটাই তো স্বাভাবিক হওয়া উচিত! আমরা নিজেরাও তো দেবদাসের মতো প্রেম করিনি, আমাদের সময়োপযুগী বিচার-বুদ্ধি নিয়ে করেছি। তারাও তাদের মতোই করে করেছে, তাতে যেন এই সমাজের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! যারা তাদের শাস্তির ব্যাপারটা অনুমোদন করেছেন, তাদের একজনও কি কৈশরে প্রেমে পড়েন নি? এ কথাও কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে!
এ সমাজে ভালোবেসে প্রেমিকার হাত ধরাটা অপরাধ, খ্যাক করে রাস্তায় প্রকাশ্যে একদলা থুতু ফেলাটা সামাজিকতা!