প্রিন্ট এর তারিখ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||
প্রকাশের তারিখ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে বহিঃশক্তি ও আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততার দাবি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনেরা
||
বিডিআর বিদ্রোহের নামে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ঘটনাকে ঘিরে গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেন কমিশন সদস্যরা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তদন্তে বহিঃশক্তির সম্পৃক্ততা এবং তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার অংশগ্রহণের শক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে—এমনটাই দাবি করেছে কমিশন।কমিশনের নেতৃত্ব ও সদস্যরাকমিশনের প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) আ. ল. ম. ফজলুর রহমান। অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন–
মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার (অব.), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান বীরপ্রতীক (অব.), মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ (অব. যুগ্ম সচিব), ড. এম. আকবর আলী (অব. ডিআইজি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. শরীফুল ইসলাম এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।“জাতি অন্ধকারে ছিল; সত্য উদ্ঘাটন জরুরি ছিল” — প্রধান উপদেষ্টাপ্রতিবেদন গ্রহণকালে প্রধান উপদেষ্টা বলেন—“বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতি দীর্ঘদিন ধরেই অন্ধকারে ছিল। আপনাদের কাজ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর সমাধান দেবে।”তিনি আরও জানান, এই প্রতিবেদন বহু শিক্ষণীয় বিষয় উন্মোচন করেছে, যা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের জন্য মূল্যবান হবে।“১৬ বছর পর বহু আলামত নষ্ট—তবুও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বে কাজ” — কমিশন প্রধানমেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান বলেন—“ঘটনার এত বছর পর অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে, অনেক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দেশ ছেড়েছেন। তবুও আমরা দুই ধাপে সাক্ষ্য নিয়েছি; কারও বক্তব্য ৮ ঘণ্টার বেশি শুনেছি।”তিনি জানান, সামরিক–অসামরিক কর্মকর্তা, শহীদ পরিবারের সদস্য, বিডিআর/বিজিবি সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ মোট ২৬৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।বহিঃশক্তি ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার দাবিকমিশনের দাবি—
বহিঃশক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল
তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা পরিকল্পনায় অংশ নেন
মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার দাবি করেন—“ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যা। এর মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস।”তিনি আরও অভিযোগ করেন—
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জড়িতদের রক্ষায় ভূমিকা রাখেন
তাদের একটি ২০–২৫ জনের মিছিল পিলখানায় প্রবেশ করে, পরে তা দুই শতাধিক হয়ে বের হয়
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিয়েছেন—এমন দাবি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে
সেনাবাহিনী অ্যাকশন না নেওয়া নিয়ে প্রশ্নকমিশনের দাবি—
ঘটনার সময় সেনাবাহিনী কেন অভিযান চালায়নি, তা তদন্তে উঠে এসেছে
তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অবস্থান করায় সেনাসদরে ফিরে যাননি
নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানও সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন
জেনারেল মঈনের বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে—
“আমি অ্যাকশন নিলে ভারত বাংলাদেশে ইন্টারভেন করত।”বিদেশি সংশ্লিষ্টতা নিয়ে দাবিকমিশন প্রধান বলেন—“ঘটনার সময় বাংলাদেশে আসা ৬৭ জন বিদেশির তথ্য পাওয়া যায়নি—এটি আমাদের সন্দেহকে আরও ঘনীভূত করেছে।”তার দাবি, বিদেশি প্রভাব ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থ একত্রে বিদ্রোহকে উসকে দেয়।তাপসসহ একাধিক রাজনৈতিক নেতার নাম তদন্ত প্রতিবেদনেদাবি অনুযায়ী, জড়িতদের তালিকায় রয়েছেন—
শেখ ফজলে নূর তাপস
শেখ সেলিম
মির্জা আজম
জাহাঙ্গীর কবির নানক
সাহারা খাতুন
জেনারেল তারেক
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন
সাবেক ডিজিএফআই প্রধান জেনারেল আকবর
কমিশন দাবি করেছে—
তারা বিডিআর সদস্যদের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে বিদ্রোহ ঘটায় এবং সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় প্রতিবেশী দেশ ভারত।র্যাব–পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কেও মন্তব্যতদন্তে উঠে এসেছে, পাঁচ নম্বর গেটে র্যাব সদস্যরা অবস্থান করলেও কোনো উদ্যোগ নেননি। কমিশনের বক্তব্য—
এ ধরনের পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপে র্যাব বা পুলিশের আলাদা নির্দেশনার প্রয়োজন হয় না।দীর্ঘদিনের প্রস্তুতিকমিশনের দাবি—
বিদ্রোহের পরিকল্পনা ২০০৮ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে শুরু হয়।
তাপসসহ অনেকে মসজিদ, ট্রেনিং গ্রাউন্ড ও জুমার নামাজের পর বৈঠক করেছেন।সুপারিশপ্রতিবেদনে ভবিষ্যতে বাহিনীর মধ্যে আস্থা–অসন্তোষের ব্যবধান কমানো, গোয়েন্দা সক্ষমতা বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা জোরদারসহ একাধিক সুপারিশ রাখা হয়েছে।
কপিরাইট © ২০২৫ সর্বস্ব সংরক্ষিত গণবার্তা