প্রিন্ট এর তারিখ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||
প্রকাশের তারিখ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার ইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যুর প্রস্তুতিতো
নিজস্ব প্রতিবেদক ||
রাজস্ব আয়ের অর্থে পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় মেটানো সম্ভব না হওয়ায় প্রতি বছরই দেশীয় ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিতে হয় সরকারকে। স্থানীয় উৎস থেকে নেওয়া ঋণের বড় অংশ আসে ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে। সাম্প্রতিক সময়ে এসব বিলের সুদহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় সরকারের সুদ ব্যয়ও দ্রুত বাড়ছে। এই ব্যয় কমাতেই এবার শরিয়াহভিত্তিক স্বল্পমেয়াদি ইসলামিক ট্রেজারি বিল (সুকুক) ইস্যুর উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ বিভাগ।চলতি অর্থবছরেই ২০ হাজার কোটি টাকার ইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যুর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে আগামী সপ্তাহে বাহরাইনে পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণে যাচ্ছেন অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কর্মকর্তা।সুদ ব্যয় কমাতে ইসলামিক বিলের পরিকল্পনাঅর্থ বিভাগের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিডিএমসি) সাম্প্রতিক সভায় জানানো হয়—• প্রচলিত ৯১, ১৮২ ও ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার ১০%–এর বেশি, ভারিত গড় ১০.২৭%• স্বল্পমেয়াদি সুকুকের গড় ভাড়ার হার ৯%• ফলে ইসলামিক ট্রেজারি বিল ব্যবহার করলে ১.২০ শতাংশ কম খরচে অর্থায়ন সম্ভবপ্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ২০ হাজার কোটি টাকার ইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যু করা গেলে বছরে প্রায় ২৪০ কোটি টাকা সুদ ব্যয় সাশ্রয় হতে পারে।সরকারের সুদ পরিশোধের চাপঅর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী—• ২০২৪–২৫ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা• স্থানীয় ঋণের সুদ: ১ লাখ ১৬ হাজার ৬১৭ কোটি• বৈদেশিক ঋণের সুদ: ১৭ হাজার ৮১২ কোটি• আগের অর্থবছরে সুদ ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা• চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরে সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকাট্রেজারি বিলের মাধ্যমে গত অর্থবছরে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে ৪১ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। জুন ২০২৫ শেষে ট্রেজারি বিলের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা।ইসলামিক আর্থিক পণ্যের বাজার ও সম্ভাবনাবাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং জনপ্রিয় হলেও ইসলামিক আর্থিক পণ্যের বাজার এখনো সীমিত। বর্তমানে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো প্রচলিত ট্রেজারি বিল–বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে না। ইসলামিক ট্রেজারি বিল চালু হলে তাদের জন্য নতুন বিনিয়োগ সুযোগ তৈরি হবে।অর্থ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন—“দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ইসলামিক ট্রেজারি বিল চালু হলে পণ্য বৈচিত্র্য বাড়বে এবং শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো এতে বিনিয়োগ করতে পারবে। ব্যক্তিগত পর্যায়েও অনেকেই এ ধরনের পণ্যকে অগ্রাধিকার দেন।”বাহরাইনে প্রশিক্ষণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যুর কারিগরি জ্ঞান অর্জনের জন্য অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কর্মকর্তা ২১–২৫ ডিসেম্বর বাহরাইনে প্রশিক্ষণ নেবেন।বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ইসতেকমাল হোসেন জানান—• এখন পর্যন্ত দেশে ছয়টি সুকুক ইস্যু হয়েছে• প্রতিটিতেই ৫–৬ গুণ ওভার সাবস্ক্রিপশন• নতুন সুকুক ইস্যুতে সময় লাগে কারণ অন্তর্নিহিত সম্পদ পাওয়া কঠিন• স্বল্পমেয়াদি ইসলামিক ট্রেজারি বিল চালু হলে বিনিয়োগকারীদের জন্য নিয়মিত শরিয়াহভিত্তিক পণ্য পাওয়া সহজ হবেতিনি আরও জানান, প্রশিক্ষণ শেষে আগামী রমজানেই প্রথম ইসলামিক ট্রেজারি বিল ইস্যুর লক্ষ্য রয়েছে।
কপিরাইট © ২০২৫ সর্বস্ব সংরক্ষিত গণবার্তা