প্রিন্ট এর তারিখ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||
প্রকাশের তারিখ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
শীত পড়তেই অসুস্থ হচ্ছেন বাড়ির বয়স্কেরা? দুর্বল হার্ট, শ্বাসকষ্ট থাকলে কী কী খাওয়াবেনা
হেলথ ডেস্ক ||
শীত এলেই বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের অসুস্থতা যেন বাড়তি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা কমে যায়। বাংলাদেশে শীতকালে তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়ার কারণে প্রবীণদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস ও সর্দি-কাশির প্রকোপ বেড়ে যায়—এমন তথ্য চিকিৎসকরাও নিয়মিত উল্লেখ করে থাকেন।বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স ৬০ পেরোলেই শরীরের ইমিউন সিস্টেম ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করে। এই অবস্থায় শীতকালীন সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, হাঁপানি অ্যাটাক কিংবা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি থাকে। তাই শুধু ওষুধের ওপর নির্ভর না করে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে বাড়তি সতর্কতা জরুরি।শীতকালে বয়স্করা কেন বেশি অসুস্থ হনবাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী—
ঠান্ডায় রক্তনালি সংকুচিত হয়, ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়
শীতকালে পানি কম খাওয়ার কারণে ডিহাইড্রেশন ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়
ঠান্ডা বাতাসে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়
শরীর কম নড়াচড়া করায় রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়
বিশেষ করে যাঁদের আগে থেকেই হার্ট দুর্বল, হাঁপানি বা ডায়াবিটিস আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি দ্বিগুণ।‘ইটিং ডিজঅর্ডার’ বেশি হয় বয়স্কদেরইচিকিৎসকদের ভাষায়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণদের মধ্যে Eating Disorder বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
বাংলাদেশে এটি বেশ সাধারণ একটি চিত্র—
অনেক প্রবীণ নারী সংসারের কাজ সামলাতে গিয়ে নিজের খাবার বাদ দেন
ওষুধ খাওয়ার সময় খাবার না খেয়ে ফেলেন
আবার কেউ কেউ লুকিয়ে মিষ্টি, পিঠা, ভাজাপোড়া খেয়ে ফেলেন
এর ফলেই দেখা দেয়—
কোষ্ঠকাঠিন্য
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS)
গাঁটের ব্যথা
হঠাৎ দুর্বল হয়ে পড়া
বারবার সংক্রমণ
শীতকালে বয়স্কদের জন্য উপযোগী খাবার (বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে)১. হার্ট দুর্বল হলে
গরম দুধ (চিনি ছাড়া)
ওটস বা লাল চালের ভাত (পরিমিত)
সামুদ্রিক মাছ (রুই, কাতলা, ইলিশ নয়—চর্বি বেশি)
বাদাম (ভেজানো চিনাবাদাম বা কাজু অল্প)
২. শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি থাকলে
আদা ও তুলসী দিয়ে হালকা গরম পানি
মধু (১ চা চামচ)
সবজি স্যুপ (লাউ, কুমড়া, গাজর)
হলুদ মেশানো গরম দুধ (রাতে)
চিকিৎসকেরা বলেন, ঠান্ডা দই, সফট ড্রিংক ও বরফ দেওয়া খাবার হাঁপানির রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
৩. ডায়াবিটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
লাল আটা বা আটার রুটি
শাকসবজি (পালং, লাল শাক, ডাটা শাক)
পেঁপে, পেয়ারা, আপেল (পরিমিত)
পর্যাপ্ত পানি (গরম বা কুসুম গরম)
যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত
অতিরিক্ত মিষ্টি ও পিঠা
ভাজাপোড়া (শিঙাড়া, কচুরি)
অতিরিক্ত লবণ
ঠান্ডা পানীয়
শীতকালে বয়স্কদের জন্য বাড়তি যত্ন
নিয়মিত গরম কাপড় ব্যবহার
সকালে হালকা রোদ পোহানো
দিনে অন্তত ২০–৩০ মিনিট হাঁটা
নির্দিষ্ট সময়ে খাবার ও ওষুধ খাওয়া
উপসংহারশীতকালে বয়স্কদের সুস্থ রাখা শুধু ওষুধের বিষয় নয়—সঠিক খাবার, নিয়মিত রুটিন ও পরিবারের যত্নই সবচেয়ে বড় চিকিৎসা। সময়মতো খাওয়াদাওয়া ও সচেতন জীবনযাপন করলে হার্ট, শ্বাসকষ্ট বা ডায়াবিটিস থাকলেও ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাদ্য বা ওষুধে বড় পরিবর্তন না করাই উত্তম।
কপিরাইট © ২০২৫ সর্বস্ব সংরক্ষিত গণবার্তা