প্রিন্ট এর তারিখ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||
প্রকাশের তারিখ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজায় লাখো মানুষের ঢলা
স্টাফ রিপোর্টার ||
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরীফ ওসমান হাদিকে শেষ বিদায় জানাতে রাজধানীর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া এভিনিউ ঘিরে শনিবার নেমে আসে লাখো মানুষের ঢল। স্মরণকালের বৃহত্তম এই জানাজায় নানা শ্রেণি-পেশা, দল-মত নির্বিশেষে কয়েক লাখ মানুষ অংশ নেন। আবেগঘন পরিবেশে অশ্রুসিক্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় তার জানাজা।শনিবার সকাল থেকেই জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা ও মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জড়ো হতে থাকেন সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক কর্মী ও ওসমান হাদির সহযোদ্ধারা। দুপুরের আগেই সংসদ চত্বর, মানিক মিয়া এভিনিউ ছাড়িয়ে আশপাশের সড়কগুলো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ ছুটে আসেন জানাজায় অংশ নিতে।দুপুরে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জোহরের নামাজ আদায়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে জানাজার কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন শহীদ ওসমান হাদির সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন। এরপর বক্তব্য দেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সর্বশেষ বক্তব্য রাখেন শহীদ হাদির বড় ভাই অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক। তার আবেগঘন বক্তব্যে জানাজায় উপস্থিত বহু মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন।এরপর অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে অনুষ্ঠিত হয় জানাজার নামাজ। জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধানরাও।জানাজা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসমাগম এতটাই বৃদ্ধি পায় যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে অনেকেই সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশ করেন। মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে ফার্মগেট, খামারবাড়ি, ধানমণ্ডি, বিজয় সরণিসহ আশপাশের সব সড়কে মানুষের ঢল নামে। জানাজার সময়ও বিভিন্ন দিক থেকে মানুষ আসতে থাকে, চারপাশে শোনা যায় নানা স্লোগান।জানাজা শেষে শহীদ ওসমান হাদির মরদেহ নিয়ে তার সহযোদ্ধা ও অনুসারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের উদ্দেশে রওনা হন। জানাজা ফেরত মানুষের তোড়ে সংসদ ভবন ও আশপাশের সড়কগুলো দীর্ঘ সময় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে মরদেহ পৌঁছালে সেখানে উপস্থিত মানুষজন আবেগে ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম, জিএস এস এম ফরহাদ, এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবেরসহ হাদির সহযোদ্ধারা।পরবর্তীতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমাধি কমপ্লেক্সে শহীদ ওসমান হাদিকে দাফন করা হয়। মাহমুদুর রহমান, সাদিক কায়েম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ কয়েকজন তার মরদেহ কবরে নামান। দাফন শেষে বিকাল ৪টার দিকে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন শহীদ হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আল্লাহর কাছে তার ভাইয়ের শাহাদত কবুল ও গুনাহ মাফের দোয়া করেন।উল্লেখ্য, ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ নির্বাচন করতে চাওয়া শরীফ ওসমান হাদি গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর পুরানা পল্টনে রিকশায় থাকা অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ দেশে আনা হয় এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে রাখা হয়।
কপিরাইট © ২০২৫ সর্বস্ব সংরক্ষিত গণবার্তা