০১:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুর্বল ছয় ব্যাংক একীভূত হয়ে আসছে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে

দীর্ঘদিনের অনিয়ম, লুটপাট ও আর্থিক দুর্বলতায় বিপর্যস্ত ছয়টি বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করে সরকারিভাবে পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াটি চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, গত দেড় দশকে কিছু ব্যাংকে নজিরবিহীন অনিয়ম হয়েছে, যার ফলে ব্যাংকগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। এ অবস্থায় সরকার নতুনভাবে পরিকল্পনা নেয় দুর্বল ব্যাংকগুলোর স্থিতিশীলতা ফেরাতে।

প্রথম ধাপে যেসব ব্যাংক রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে, সেগুলো হলো—সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক। এগুলোর মধ্যে পাঁচটি ছিল আলোচিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নিয়ন্ত্রণে, আর একটি ব্যাংক ছিল নজরুল ইসলাম মজুমদারের অধীনে।

গভর্নর ড. মনসুর জানিয়েছেন, এই ব্যাংকগুলোকে রাষ্ট্র সাময়িকভাবে মালিকানায় নেবে এবং পুঁজির ঘাটতি পূরণে সরকারি অর্থায়ন করা হবে। তারল্য সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে সহায়তা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “আমরা এগুলোকে পুনর্গঠনের পর আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছি। এর আগে ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১২.৫ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।”

বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতে মূলধন সংরক্ষণের ন্যূনতম হার ১২.৫ শতাংশ। এর মধ্যে ১০ শতাংশ মূলধন বাধ্যতামূলক এবং অতিরিক্ত ২.৫ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার হিসেবে রাখতে হয়।

এদিকে, ব্যাংক খাতে অস্থিরতার পেছনে যাদের দায় রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর। আর্থিক অপরাধ তদন্তে একাধিক সংস্থা কাজ করছে এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, “যারা টাকা পাচার করেছে, তাদের যেন ঘুম হারাম হয়—সে ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। একইসঙ্গে আমাদেরও দিন-রাত এক করতে হচ্ছে সেই অর্থ ফেরত আনার জন্য।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

দুর্বল ছয় ব্যাংক একীভূত হয়ে আসছে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে

Update Time : ১২:৫৪:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

দীর্ঘদিনের অনিয়ম, লুটপাট ও আর্থিক দুর্বলতায় বিপর্যস্ত ছয়টি বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করে সরকারিভাবে পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াটি চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, গত দেড় দশকে কিছু ব্যাংকে নজিরবিহীন অনিয়ম হয়েছে, যার ফলে ব্যাংকগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। এ অবস্থায় সরকার নতুনভাবে পরিকল্পনা নেয় দুর্বল ব্যাংকগুলোর স্থিতিশীলতা ফেরাতে।

প্রথম ধাপে যেসব ব্যাংক রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে, সেগুলো হলো—সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক। এগুলোর মধ্যে পাঁচটি ছিল আলোচিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নিয়ন্ত্রণে, আর একটি ব্যাংক ছিল নজরুল ইসলাম মজুমদারের অধীনে।

গভর্নর ড. মনসুর জানিয়েছেন, এই ব্যাংকগুলোকে রাষ্ট্র সাময়িকভাবে মালিকানায় নেবে এবং পুঁজির ঘাটতি পূরণে সরকারি অর্থায়ন করা হবে। তারল্য সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে সহায়তা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “আমরা এগুলোকে পুনর্গঠনের পর আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছি। এর আগে ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১২.৫ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।”

বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতে মূলধন সংরক্ষণের ন্যূনতম হার ১২.৫ শতাংশ। এর মধ্যে ১০ শতাংশ মূলধন বাধ্যতামূলক এবং অতিরিক্ত ২.৫ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার হিসেবে রাখতে হয়।

এদিকে, ব্যাংক খাতে অস্থিরতার পেছনে যাদের দায় রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর। আর্থিক অপরাধ তদন্তে একাধিক সংস্থা কাজ করছে এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, “যারা টাকা পাচার করেছে, তাদের যেন ঘুম হারাম হয়—সে ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। একইসঙ্গে আমাদেরও দিন-রাত এক করতে হচ্ছে সেই অর্থ ফেরত আনার জন্য।”