শিক্ষার্থীদের দেওয়া ২১ দফা দাবি গিয়ে গড়ায় রেজিস্ট্ণর ১ দফাতে। অবশেষে দূর্নীতি, অনিয়ম ও মেয়াদকাল শেষ হলেও কাজে অব্যাহত থাকার অভিযোগে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলন এবং অবরুদ্ধতার এক পর্যায়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস. তাসাদ্দেক আহমেদ।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে গবির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি বরাবর রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত পদত্যাগ পত্রটি সকলের প্রকাশ্যে আসে।
এর আগে সকাল থেকে প্রশাসনিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, রেজিস্ট্রার এর পদত্যাগ সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ২১ দফা দাবি পেশ করে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে সব দাবি মেনে নিতে স্বীকৃতি জানালেও, রেজিস্ট্রার অপসারণের বিষয়ে তদন্ত ও ট্রাস্টি বোর্ডের মিটিংয়ের বরাতে সময় চান ট্রাস্টি ও প্রশাসন।
ছাত্রদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি শিরিন হক জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তের মাধ্যমে ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় তার বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পরে ছাত্ররা এইরূপ মন্তব্যকে অসঙ্গতিপূর্ণ জানিয়ে ১ দফা দাবি নিয়ে এদিনেই রেজিস্ট্রারের আপসারণ না হওয়া অব্দি উপাচার্যের সভাকক্ষ ত্যাগ না করার হুশিয়ারী দেন এবং এক পর্যায়ে বিকালে প্রশাসন সহ বিশ্ববিদ্যালয়কেই অবরুদ্ধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
১ দফাতে তারা উল্লেখ করেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করায় প্রতিবাদ জানিয়ে কৃষিবিদ এস তাসাদ্দেক আহমেদ বিবৃতি দিয়েছিল তা মূলত নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর হয়রানি ও জুলুমের সামিল।
গত ২০২০ সালের ০৮ ডিসেম্বর ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ট্রাস্টি বোর্ডের সভা অনুযায়ী তাকে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এ বছরের শুরুতে তার বয়স শেষ হলেও বিশেষ ক্ষমতাবলে চাকুরিতে অব্যাহত ছিলেন তিনি। এছাড়া সাংবাদিকদের হাতে আসে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লায়লা পারভীন বানু স্বাক্ষরিত আরেকটি নিয়োগ পত্র। যেখানে তাকে ২০২১ সালের জানুয়ারির ১৯ তারিখে ০৩ বৎসরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। সে হিসেবে ২০২৪ সালের জানুয়ারির ১৯ তারিখে মেয়াদ পূর্ণ হয়ে আরও ৭মাস অতিবাহিত হলেও রেজিস্ট্রারের পদে পুনর্বহাল থেকেছেন তিনি।
এছাড়া তাসাদ্দেক আহমেদ তার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মজীবনের শুরুতেই অভিযুক্ত হন নামের আগে ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহারের জন্য। যদিও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ বিষয়ে বিশেষ বিবেচনায় ক্ষমা করে দেন শুধুমাত্র ইউজিসির শর্তে ডক্টরেট ডিগ্রি না প্রয়োজন হওয়ায়।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা সময়ে বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি বাণিজ্য ও চাকুরিতে স্বজন প্রীতির অভিযোগ। ২৫ জনের অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং একাধিক শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ছিল সব সময় তার হাতের জিম্মি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি ও স্বপ্নদ্রষ্টা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে চাইলেও রেজিস্ট্রার আর তার দোসরদের চক্রান্তে দীর্ঘ ৪বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ৩য় গাকসু নির্বাচন।
এছাড়া ভেটেরিনারি অনুষদের “বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল” কতৃক অনুমোদিত নির্দিষ্ট ৫০টি আসনের থেকেও অধিক সংখ্যক ভর্তি এবং ৮ জন শিক্ষার্থীর থেকে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে করিয়েছিলেন ভর্তি। যা তৎকালে প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করা হলেও হেনস্তা ও জরিমানার স্বীকার হতে হয় ১ শিক্ষার্থীকে।
আন্দোলন চলাকালে রেজিস্ট্রার এস তাসাদ্দেক আহমেদ জানান, ‘শিক্ষার্থীরা চাইলে আমার পদত্যাগ করতে অসুবিধা নেই। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকারের জন্যই কাজ করে গেছি। কৃষি অনুষদ চালু, বিভিন্ন বিভাগে মাস্টার্স চালু, শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, বন্ধ হওয়া বিবিএ বিভাগ চালু, নতুন করে ফিসারি বিভাগ চালুর প্রক্রিয়া সহ এখন সমাবর্তনের আয়োজন করতে যাচ্ছিলাম যখন ঠিক তখন এই সকল সমস্যা আমার পূর্বের বিষয় টেনে। আমি আসার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং উপরে উঠেছে। আমার যা যা করার ছিল সবই চেষ্টা করেছি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। আমার আর কিছু বলার নাই। যেহেতু কেউ স্থায়ী নয়, আমি চলে যাবো।’
সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অরাজকতাকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে প্রশাসন। বহুবার শিক্ষার্থীরা তা রোধের প্রচেষ্টা চালালেও প্রশাসন তোয়াক্কা করেনি। সঙ্গত কারণেই এই ২১ দফা দাবী উত্থাপনের নিমিত্তে জুলুমবাজ রেজিস্ট্রারের অপসারণ জরুরী হয়ে পড়ে।’
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমানের কয়েকজন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রারের অপসারণের লক্ষ্যে আন্দোলন করে আসছিলেন গত কয়েকমাস আগে থেকেই। এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আবিদ নামে একজন শিক্ষার্থী আহত ও আইন বিভাগের একজন শিক্ষককে লাঞ্চিত করার ঘটনা ঘটে।