০৫:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছোট গল্প: নীলাস্পরী আর সাকো

  • ছায়া পথিক
  • Update Time : ০৭:৪৫:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫
  • ১২ Time View

বহুকাল আগে এক বনে দুইটা প্রজাপতি বাস করতো। ইচ্ছেমতো স্বাধীনতাও ছিল বটে তাদের। সারদিন ঘুরতো, ফিরতো, উড়তো। তাদের একটি ছিল মেয়ে যে ছিল নীলচক্ষু বিশিষ্ট (নীলাস্পরী), ছেলেটি সাদাকালো (সাকো)।  যদিও বনে আরও অজস্র প্রজাপতির ভিড়ে তারা ছিল সামান্য তবুও গল্প আজকে তাদের নিয়ে।

পরিচয় তাদের আগে থেকেই যদিও। তবে ছেলেটি ভেবে উঠতে পারেনি কখনও দূরের আকাশের চাঁদের সঙ্গী হবার কথা মানে আর কী নীলের সঙ্গী। হয়তো ডালের আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা, কথা বলতে জড়তা, ফেসবুকে রোজ সময় করে ফলো করা (ডিজিটাল জুগের প্রজাপতি বলে কথা)।

তবে একটা সময় সাকো কেন যেন এক অজানা মায়া পড়ে গেলো নীলাস্পরীর পবিত্রতা, শালীনতা, ধর্মভীরুতা, সরলতা আর নানা গূণে। তবে সে মেয়েটির কাছে কেন যেন ছিল কিছুটা ভীতু। হাজার চেষ্টা করেও কিসের যেন একটা ভয়ে বলতে পারেনি সে কখনও। হয়তো আরও হারাবার ভয়ে। ইচ্ছে করতো একসাথে হেটে চলে গন্তব্য পাড়ি দিতে, সমুদ্রের জলে পা ভিজিয়ে মনের কথা বলতে।

তবে সে কিছুকাল পরে নিজেকে যখন পরিপূর্ণ ভাবা শুরু করলো তখন কিছুটা সাহস নিয়ে একদিন বলেই ফেললো যে, সারাজীবনের জন্য হাতে হাত রেখে পাশে থাকতে চায় সে মহোময়ীর। তবে সেটা এ প্রজন্মের আর ১০ টা মানুষের মতো প্রেম বন্ধনে না আটকে যেন সারাজীবনের জন্যে।

এই তো গেলো সপ্তাহের জুম্মার রাতের কথা। সাকোটি ঘুমিয়ে পড়েছিল অজানা ঘোরের মধ্যে আনমনে নিস্তব্ধ এক রাতে। সে রাতের শেষ প্রহরের কথা, চোখ মেলে দেখে, সে যেন সমুদ্রের পাড় দিয়ে হাটতে হাটতে বিরাট এক পাহাড় পেরিয়ে চুড়ায় উঠেছে কার যেন এক মায়াবী আমন্ত্রণে। আর চার পাশে দেখতে থাকে আজকের ওয়েস্টার্ন সাজে যেন ঝলমলে এক নতুন পৃথিবী। তবু সে যেন সব চাকচিক্য ফেলে ছুটে চলেছে মায়াবীর এক দারুণ সুবাসে। যেতে যেতে যখন পাহাড়ের চুড়ায় পৌছুতেই মায়াদেবীকে ছুতে যাবে ঠিক তখনই বিশাল আকাশের কোনো এক নক্ষত্রের যেন এক দরজা খুলে গেল তার সামনে। প্রবল এক নূরানী আলোর বিচ্যুরণ ঘটিয়ে। সাকোর সেই আলোতে ঘোর কেটে উঠেছে প্রায়। থমকে গেলো মায়াবতীকে ছোয়ার পায়তার শক্তি, ডানা যেন ভার হয়ে আটকে গেছে।

হঠাৎ এসময় দরজার ভেতর থেকে ডাক এলো সাকোকে উদ্দেশ্য করে, ” দাড়াও, আর এক পাও বাড়বে না সামনে। নিশ্চয়ই হারাম কোনো কিছুতে কল্যাণ নিহিত নেই। তুমি হালাল উপায়ে ফিরে এসো। এতে তোমাদের কল্যাণ রয়েছে যা তোমাদের জন্য বৈধ। আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করো, তদুপরিই তুমি এতদিন যাকে খুজছো তাকে তোমার সাথে মিলিয়ে দেওয়া হবে। এখন যাবতীয় দুনিয়াবি সকল কিছু থেকে ফিরে যেয়ে হালাল উপায়ে শুধুমাত্র তাকেই চাও। ”  কথা বলতে বলতেই যেন মিলিয়ে গেলো মায়াবতী কোনো অচিন নিমিশে নক্ষত্রের দরজাভেদ করে। আর একটা ভয়ানক হাসির বিকট শব্দ আসতে লাগলো পুরো আকাশ জুড়ে।  এ অবস্থায় শরির যেন ভয়ে থরথর করে কাপছে হঠাৎ এসময় কানে এলো তার ফজরের আজান আর চোখ খুলতেই আবিষ্কার করে বিছানা থেকে বেশ দূরে যেখানে গতরাতে জায়নামাজ বিছানো ছিল তার ঠিক উপরে শুয়ে আছে সে। ঘুমের ঘোর থেকে উঠেই সৃষ্টিকর্তার ইবাদত সেরে বুকের ভেতরে ধুক ধুক করে বেজে উঠলো সেই রাতের কথা। কেমন যেন এক শূন্যতা ঘিরে ধরেছিল তার ভেতরে।

সৃষ্টিকর্তার নিকট দ্রুত সে তওবা করে নিলো নিজের ভূলের জন্য যে, এতদিন তারা মাঝে মাঝে কথোপকথন করতো যেটা একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষদের উচিৎ ছিল না।

এরপর থেকে মনস্থির করলো, নীলাস্পরিকে জানিয়ে দিবে তার মনে কথা। যদিও সাহস সঞ্চার করে আজও তার সামনে দাড়াতে পারেনি। হয়তো এটা তার ভেতরে ঘিরে ধরেছে হারানোর ভয়। যদি সে পূর্বের সম্পর্কও ছিন্ন হয়ে দূরে হারানোর হয়। কারন সে চায় না তাকে কোনোকালে হারিয়ে ফেলতে।

সাকো হালালভাবে তার কথা জানাবে বলতে মূলত প্রেম নিবেদন নয়, চায় তার রাজ্যের মহারাণী করেই তবে প্রজাপতিদের রাজ্যে ফিরতে। যদি নীলাস্পরী মহারাণী তাকে প্রশ্রয় দেন অবিভাবকের নিমিত্তে চিঠি প্রেরণের সুযোগ।

আমাদের গল্প এখনও অসম্পূর্ণ, পূর্ণতা পাবে হয়তো তাদের মিল হলে নয়তো অপূর্ণই রয়ে যাবে যুগ যুগ ধরে। শুধু শ্রতাদের কাল্পনিক চিন্তার খোরাক তৈরিতে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ছোট গল্প: নীলাস্পরী আর সাকো

Update Time : ০৭:৪৫:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫

বহুকাল আগে এক বনে দুইটা প্রজাপতি বাস করতো। ইচ্ছেমতো স্বাধীনতাও ছিল বটে তাদের। সারদিন ঘুরতো, ফিরতো, উড়তো। তাদের একটি ছিল মেয়ে যে ছিল নীলচক্ষু বিশিষ্ট (নীলাস্পরী), ছেলেটি সাদাকালো (সাকো)।  যদিও বনে আরও অজস্র প্রজাপতির ভিড়ে তারা ছিল সামান্য তবুও গল্প আজকে তাদের নিয়ে।

পরিচয় তাদের আগে থেকেই যদিও। তবে ছেলেটি ভেবে উঠতে পারেনি কখনও দূরের আকাশের চাঁদের সঙ্গী হবার কথা মানে আর কী নীলের সঙ্গী। হয়তো ডালের আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা, কথা বলতে জড়তা, ফেসবুকে রোজ সময় করে ফলো করা (ডিজিটাল জুগের প্রজাপতি বলে কথা)।

তবে একটা সময় সাকো কেন যেন এক অজানা মায়া পড়ে গেলো নীলাস্পরীর পবিত্রতা, শালীনতা, ধর্মভীরুতা, সরলতা আর নানা গূণে। তবে সে মেয়েটির কাছে কেন যেন ছিল কিছুটা ভীতু। হাজার চেষ্টা করেও কিসের যেন একটা ভয়ে বলতে পারেনি সে কখনও। হয়তো আরও হারাবার ভয়ে। ইচ্ছে করতো একসাথে হেটে চলে গন্তব্য পাড়ি দিতে, সমুদ্রের জলে পা ভিজিয়ে মনের কথা বলতে।

তবে সে কিছুকাল পরে নিজেকে যখন পরিপূর্ণ ভাবা শুরু করলো তখন কিছুটা সাহস নিয়ে একদিন বলেই ফেললো যে, সারাজীবনের জন্য হাতে হাত রেখে পাশে থাকতে চায় সে মহোময়ীর। তবে সেটা এ প্রজন্মের আর ১০ টা মানুষের মতো প্রেম বন্ধনে না আটকে যেন সারাজীবনের জন্যে।

এই তো গেলো সপ্তাহের জুম্মার রাতের কথা। সাকোটি ঘুমিয়ে পড়েছিল অজানা ঘোরের মধ্যে আনমনে নিস্তব্ধ এক রাতে। সে রাতের শেষ প্রহরের কথা, চোখ মেলে দেখে, সে যেন সমুদ্রের পাড় দিয়ে হাটতে হাটতে বিরাট এক পাহাড় পেরিয়ে চুড়ায় উঠেছে কার যেন এক মায়াবী আমন্ত্রণে। আর চার পাশে দেখতে থাকে আজকের ওয়েস্টার্ন সাজে যেন ঝলমলে এক নতুন পৃথিবী। তবু সে যেন সব চাকচিক্য ফেলে ছুটে চলেছে মায়াবীর এক দারুণ সুবাসে। যেতে যেতে যখন পাহাড়ের চুড়ায় পৌছুতেই মায়াদেবীকে ছুতে যাবে ঠিক তখনই বিশাল আকাশের কোনো এক নক্ষত্রের যেন এক দরজা খুলে গেল তার সামনে। প্রবল এক নূরানী আলোর বিচ্যুরণ ঘটিয়ে। সাকোর সেই আলোতে ঘোর কেটে উঠেছে প্রায়। থমকে গেলো মায়াবতীকে ছোয়ার পায়তার শক্তি, ডানা যেন ভার হয়ে আটকে গেছে।

হঠাৎ এসময় দরজার ভেতর থেকে ডাক এলো সাকোকে উদ্দেশ্য করে, ” দাড়াও, আর এক পাও বাড়বে না সামনে। নিশ্চয়ই হারাম কোনো কিছুতে কল্যাণ নিহিত নেই। তুমি হালাল উপায়ে ফিরে এসো। এতে তোমাদের কল্যাণ রয়েছে যা তোমাদের জন্য বৈধ। আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করো, তদুপরিই তুমি এতদিন যাকে খুজছো তাকে তোমার সাথে মিলিয়ে দেওয়া হবে। এখন যাবতীয় দুনিয়াবি সকল কিছু থেকে ফিরে যেয়ে হালাল উপায়ে শুধুমাত্র তাকেই চাও। ”  কথা বলতে বলতেই যেন মিলিয়ে গেলো মায়াবতী কোনো অচিন নিমিশে নক্ষত্রের দরজাভেদ করে। আর একটা ভয়ানক হাসির বিকট শব্দ আসতে লাগলো পুরো আকাশ জুড়ে।  এ অবস্থায় শরির যেন ভয়ে থরথর করে কাপছে হঠাৎ এসময় কানে এলো তার ফজরের আজান আর চোখ খুলতেই আবিষ্কার করে বিছানা থেকে বেশ দূরে যেখানে গতরাতে জায়নামাজ বিছানো ছিল তার ঠিক উপরে শুয়ে আছে সে। ঘুমের ঘোর থেকে উঠেই সৃষ্টিকর্তার ইবাদত সেরে বুকের ভেতরে ধুক ধুক করে বেজে উঠলো সেই রাতের কথা। কেমন যেন এক শূন্যতা ঘিরে ধরেছিল তার ভেতরে।

সৃষ্টিকর্তার নিকট দ্রুত সে তওবা করে নিলো নিজের ভূলের জন্য যে, এতদিন তারা মাঝে মাঝে কথোপকথন করতো যেটা একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষদের উচিৎ ছিল না।

এরপর থেকে মনস্থির করলো, নীলাস্পরিকে জানিয়ে দিবে তার মনে কথা। যদিও সাহস সঞ্চার করে আজও তার সামনে দাড়াতে পারেনি। হয়তো এটা তার ভেতরে ঘিরে ধরেছে হারানোর ভয়। যদি সে পূর্বের সম্পর্কও ছিন্ন হয়ে দূরে হারানোর হয়। কারন সে চায় না তাকে কোনোকালে হারিয়ে ফেলতে।

সাকো হালালভাবে তার কথা জানাবে বলতে মূলত প্রেম নিবেদন নয়, চায় তার রাজ্যের মহারাণী করেই তবে প্রজাপতিদের রাজ্যে ফিরতে। যদি নীলাস্পরী মহারাণী তাকে প্রশ্রয় দেন অবিভাবকের নিমিত্তে চিঠি প্রেরণের সুযোগ।

আমাদের গল্প এখনও অসম্পূর্ণ, পূর্ণতা পাবে হয়তো তাদের মিল হলে নয়তো অপূর্ণই রয়ে যাবে যুগ যুগ ধরে। শুধু শ্রতাদের কাল্পনিক চিন্তার খোরাক তৈরিতে।