তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পে বিপ্লব
তুরস্ক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। ড্রোন, যুদ্ধট্যাঙ্ক, মিসাইল সিস্টেম, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান—প্রায় সব খাতেই দেশটি এখন নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত অস্ত্র তৈরি করছে। একই সঙ্গে রপ্তানি সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ৪০টিরও বেশি দেশে পৌঁছেছে।গত এক দশকে তুরস্ক যেসব দেশীয় “গেম চেঞ্জার” অস্ত্র তৈরি করেছে তার মধ্যে রয়েছে—Altay ট্যাঙ্ক, TRG-300 রকেট সিস্টেম, স্টিল ডোম এয়ার ডিফেন্স, Bayraktar TB2 ড্রোন, Akinci এবং Kizilelma ড্রোন, ATAK হেলিকপ্টার এবং পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘Kaan’।ড্রোন প্রযুক্তিতে বৈশ্বিক নেতৃত্বড্রোন খাতে তুরস্ক বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ।
Bayraktar TB2 ড্রোন ইতোমধ্যে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার ২০টিরও বেশি দেশের কাছে রপ্তানি করা হয়েছে। পোল্যান্ড—যা ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য—তুরস্ক থেকে ড্রোন কিনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।আরও উন্নত ও ভারবহনক্ষম Akinci ড্রোন রপ্তানি হয়েছে সৌদি আরব, আজারবাইজান, পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
জেটচালিত মনুষ্যবিহীন ‘Kizilelma’ ভবিষ্যতের যুদ্ধবিমান প্রযুক্তিতে তুরস্ককে আরও এগিয়ে দিচ্ছে।Altay ট্যাঙ্ক থেকে স্টিল ডোম: পূর্ণ দেশীয়ীকরণের পথে অগ্রগতিতুরস্কের প্রথম দেশীয় প্রধান যুদ্ধট্যাঙ্ক Altay দক্ষিণ কোরিয়ার K2 ব্ল্যাক প্যান্থার ভিত্তিক নকশায় তৈরি হলেও এর অধিকাংশ সিস্টেম এখন দেশীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। তুরস্ক নিজস্ব ‘BATU’ পাওয়ার প্যাক তৈরি করেছে, যা ২০২৫ থেকে Altay-এ ব্যবহৃত হবে।রকেটসান নির্মিত TRG-300 ‘টাইগার’ সিস্টেম ১২০ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম। এটি ইতোমধ্যে আজারবাইজান ও বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়েছে।স্টিল ডোম নামে বহুস্তরীয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে রয়েছে HISAR-A, HISAR-O ও Siper লং-রেঞ্জ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা ক্রুজ মিসাইল, ড্রোন ও বিমান প্রতিরোধে সক্ষম।‘Kaan’ যুদ্ধবিমান: তুরস্কের পঞ্চম প্রজন্মের উচ্চাকাঙ্ক্ষাস্টিলথ প্রযুক্তি, উন্নত এভিওনিক্স ও AESA রাডার–সমৃদ্ধ ‘Kaan’ তুরস্কের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রতিরক্ষা প্রকল্প। ২০২৮ সাল থেকে এর ম্যাস প্রোডাকশন শুরু হবে, আর ২০৪০ সালের মধ্যে অন্তত ২৪০টি বিমান তুর্কি বাহিনীতে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের F-35 প্রোগ্রাম থেকে বাদ পড়ার পরই নিজস্ব যুদ্ধবিমান তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ পায়।হাইপারসনিক মিসাইল ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ প্রযুক্তিতে অগ্রগতিরোকেটসান নির্মিত ‘টাইফুন’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের বর্তমান পাল্লা ৮০০ কিলোমিটার, যা পরবর্তী ধাপে ৩,০০০ কিলোমিটারে উন্নীত করা হবে।ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সক্ষমতায় তুরস্কের আসেলসান (Aselsan) উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছে। কোরাল (Koral) জ্যামিং সিস্টেম মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশে রপ্তানি করা হয়েছে।বিশ্বব্যাপী রপ্তানি: ৪০টিরও বেশি দেশে পৌঁছেছে তুর্কি অস্ত্রতুরস্কের প্রতিরক্ষা পণ্য এখন অন্তত ৪০টিরও বেশি দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে ড্রোন রয়েছে ইউক্রেন, কাতার, আজারবাইজান, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, কুয়েত ও নাইজারে।
ATAK হেলিকপ্টার ফিলিপাইনে সরবরাহ করা হয়েছে, পাকিস্তানের সাথে রয়েছে বড় চুক্তি।
নৌ প্রযুক্তি খাতে পাকিস্তানের সঙ্গে ‘MILGEM’ করভেট প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়া ও ইউক্রেনের সাথেও রয়েছে মিসাইল ও ইঞ্জিন উন্নয়নে সহযোগিতা।২০২৩ সালে তুরস্কের প্রতিরক্ষা রপ্তানি আয় দাঁড়ায় ৪.৪ বিলিয়ন ডলারে—যা তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।বিদেশিনির্ভরতা থেকে দেশীয় সক্ষমতায় রূপান্তর
একসময় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ইসরায়েলি প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল তুরস্ক এখন ড্রোন, রাডার, যুদ্ধযান, ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান—প্রায় সব ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য দেশীয় সক্ষমতা অর্জন করেছে। ন্যাটো কাঠামোর ভেতর থেকেও দেশটি প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বনির্ভরতার দিকে দ্রুত এগোচ্ছে।