পুরাতন ল্যাপটপ কেনার সময় সবচেয়ে আগে নজর দিতে হবে ডিভাইসটির বাইরের কাঠামোতে। কোথাও ফাটল, ভাঙা হিঞ্জ, কি-বোর্ডের বোতাম নষ্ট কিংবা টাচপ্যাড ঠিকমতো কাজ না করলে পরবর্তীতে বাড়তি খরচ গুনতে হবে। আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান বলেন, “অনেক সময় জোড়া লাগানো বডি, রিপেয়ার করা স্ক্রিন বা লুকানো ডেন্ট থাকে, যা ক্রেতারা বুঝতে পারেন না। বাহ্যিক অবস্থা ভালো না হলে ভেতরের অংশও ঝুঁকিতে থাকে।”
ব্যাটারি পুরাতন ল্যাপটপের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ। অনেক ক্ষেত্রে মাত্র ৩০–৪০ মিনিট ব্যাকআপ পাওয়া যায়। তাই অন্তত ১০–১৫ মিনিট ব্যবহার করে ব্যাটারির স্থায়িত্ব পরীক্ষা করা জরুরি। দোকানদারদের কাছ থেকে ব্যাটারি বা চার্জারের পূর্ব ইতিহাস জানা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্ভব হলে অরিজিনাল চার্জারসহ ল্যাপটপ কেনাই উত্তম।
পুরাতন ল্যাপটপের হার্ডডিস্কে (HDD) সমস্যা হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে। যেহেতু HDD বয়সের সঙ্গে খারাপ হয়, তাই এর স্বাস্থ্য (Health) চেক করা গুরুত্বপূর্ণ। SSD যুক্ত ল্যাপটপ হলে গতি ভালো পাওয়া যায়, তবে সেটিও পুরাতন হলে স্পিড টেস্ট করা জরুরি। র্যামের সঠিক ক্ষমতা, জেনারেশন ও আপগ্রেডের সুযোগ আছে কি না—তা নিশ্চিত করতে হবে।
অনেক সময় ল্যাপটপের স্ক্রিনে সূক্ষ্ম লাইন, ডেড পিক্সেল বা লাইট ব্লিড থাকে যা ক্রেতার চোখ এড়িয়ে যায়। স্ক্রিন উজ্জ্বলতা বাড়ানো–কমানো, কালো–সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে টেস্ট করলে এসব ত্রুটি ধরা পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিসপ্লে–সংক্রান্ত সমস্যা সবচেয়ে ব্যয়বহুল, তাই কেনার আগেই নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
আইটি মার্কেটের বড় একটি সমস্যা হলো চুরি করা বা অবৈধভাবে আমদানি করা ল্যাপটপ বাজারে মিশে যাওয়া। তাই ল্যাপটপের সিরিয়াল নম্বর ডিভাইস, বক্স এবং সিস্টেম ইনফো—তিন জায়গায় মিলিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্র্যান্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সিরিয়াল নম্বর দিলে ওয়ারেন্টি স্ট্যাটাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ক্রেতারা বলছেন, অনেক দোকানে ৭ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত চেকিং ও সার্ভিস গ্যারান্টি দেওয়া হয়। প্রযুক্তি বিশ্লেষক শাহেদুল ইসলাম বলেন, “রাস্তায় বা অপরিচিত লোকের কাছ থেকে কেনা ল্যাপটপে প্রতারণার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ব্র্যান্ডেড বা পরিচিত দোকান ভালো সার্ভিস দেয়। তাই বিশ্বস্ত দোকানই সঠিক পছন্দ।”
অতি কম দামে ‘অতিরিক্ত ভালো অফার’ সন্দেহজনক হতে পারে
প্রসেসর জেনারেশন (৮ম জেন বা তার উপরে) যাচাই করতে হবে
প্রতিটি পোর্ট, ওয়েবক্যাম, স্পিকার, মাইক্রোফোন পরীক্ষা করতে হবে
ভারী কাজের জন্য i7/Ryzen 7, সাধারণ কাজের জন্য i5/Ryzen 5 বেছে নেওয়া উচিত
কম বাজেটে ভালো মানের ল্যাপটপ পাওয়া সম্ভব, তবে এর জন্য দরকার একটু সতর্কতা ও খুঁটিনাটি পরীক্ষা। প্রযুক্তি বাজারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন—ক্রেতারা সচেতন হলেই সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ বাজার আরও স্বচ্ছ হবে এবং প্রতারণার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।

বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫

আপনার মতামত লিখুন