ঢাকা    বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
গণবার্তা

হাদির ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল দেশ, সর্বত্র বিক্ষোভ ও অবরোধ

হাদির ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল দেশ, সর্বত্র বিক্ষোভ ও অবরোধ

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ, মশাল মিছিল ও দোয়া কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় শরীফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। ঘটনার পরপরই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার ওপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণ একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ, যার উদ্দেশ্য নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা। তিনি বলেন, জুলাইয়ের যোদ্ধাদের ভয় দেখানোর লক্ষ্যেই এ হামলা চালানো হয়েছে।

নূরুল ইসলাম বুলবুল আরও বলেন, একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়—সেই প্রশ্ন আজ বড় হয়ে উঠেছে। তিনি সন্ত্রাসীদের দমনে অবিলম্বে চিরুনি অভিযান চালানো এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না হলে জনগণ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্রের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির। তারা বলেন, হাদির ওপর গুলিবর্ষণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংসের পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

ইসলামী ছাত্রশিবির রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সংগঠনটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে গণঅধিকার পরিষদ রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করে। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া মিছিল পল্টন ঘুরে আবার কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। একই দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে কর্মসূচি পালন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও যুগ্ম আহ্বায়করা এক বিবৃতিতে বলেন, এই হামলা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য অশনিসংকেত।

চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা একযোগে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং নেপথ্যের হোতাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

বরিশাল ও কুড়িগ্রামে মশাল মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। কুড়িগ্রামে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা মানে পুরো ছাত্র-জনতার ওপর হামলা।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও ঝালকাঠিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা। ঝালকাঠি সদর থানার ওসি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, অবরোধের কারণে মহাসড়কে এক ঘণ্টার বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ ছিল।

এদিকে ইলেকশন ওয়ার্কিং অ্যালায়েন্স হাদির ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. শরিফুল আলমসহ নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।

সারা দেশে চলমান এসব কর্মসূচি থেকে একটাই দাবি উঠেছে—শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

আপনার মতামত লিখুন

গণবার্তা

বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫


হাদির ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল দেশ, সর্বত্র বিক্ষোভ ও অবরোধ

প্রকাশের তারিখ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

featured Image
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ, মশাল মিছিল ও দোয়া কর্মসূচি পালিত হয়েছে।শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় শরীফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। ঘটনার পরপরই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার ওপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণ একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ, যার উদ্দেশ্য নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা। তিনি বলেন, জুলাইয়ের যোদ্ধাদের ভয় দেখানোর লক্ষ্যেই এ হামলা চালানো হয়েছে।নূরুল ইসলাম বুলবুল আরও বলেন, একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়—সেই প্রশ্ন আজ বড় হয়ে উঠেছে। তিনি সন্ত্রাসীদের দমনে অবিলম্বে চিরুনি অভিযান চালানো এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না হলে জনগণ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্রের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির। তারা বলেন, হাদির ওপর গুলিবর্ষণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংসের পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।ইসলামী ছাত্রশিবির রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সংগঠনটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে গণঅধিকার পরিষদ রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করে। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া মিছিল পল্টন ঘুরে আবার কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। একই দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে কর্মসূচি পালন করে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও যুগ্ম আহ্বায়করা এক বিবৃতিতে বলেন, এই হামলা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য অশনিসংকেত।চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা একযোগে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং নেপথ্যের হোতাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।বরিশাল ও কুড়িগ্রামে মশাল মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। কুড়িগ্রামে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা মানে পুরো ছাত্র-জনতার ওপর হামলা।দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও ঝালকাঠিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা। ঝালকাঠি সদর থানার ওসি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, অবরোধের কারণে মহাসড়কে এক ঘণ্টার বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ ছিল।এদিকে ইলেকশন ওয়ার্কিং অ্যালায়েন্স হাদির ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. শরিফুল আলমসহ নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। সারা দেশে চলমান এসব কর্মসূচি থেকে একটাই দাবি উঠেছে—শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

গণবার্তা

সম্পাদকঃ নূর মোহাম্মদ 
প্রকাশকঃ ফিরোজ আল-মামুন 

কপিরাইট © ২০২৫ সর্বস্ব সংরক্ষিত গণবার্তা