১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্সে (টুইটার) একটি বার্তা দিয়েছেন, যেখানে তিনি দিনটিকে ‘ভারতের বিজয় দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করেন। বিস্ময়ের বিষয়—তার পুরো পোস্টে বাংলাদেশের নাম একবারও উচ্চারিত হয়নি। এই বিষয়টি বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
✅ মোদির পোস্টে কী ছিল
ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার পোস্টে ১৯৭১ সালের যুদ্ধকে ভারতের “ঐতিহাসিক বিজয়” হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি লেখেন, ভারতীয় সেনাদের সাহস, ত্যাগ ও আত্মবলিদানই এই বিজয় এনে দিয়েছে—যা ভারতের ইতিহাসে গৌরবের অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।
কিন্তু পোস্টে কোথাও উল্লেখ নেই—
• বাংলাদেশের স্বাধীনতা
• ৯ মাসের গণহত্যা
• মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ
• বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম
✅ কেন বিতর্ক
১৯৭১ সালের যুদ্ধের মূল কেন্দ্র ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম। পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা, গণহত্যা, নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রাম পোড়ানো—সবকিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ভারত সামরিকভাবে যুক্ত হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনী যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
কিন্তু মোদির পোস্টে সেই বাংলাদেশের নামই অনুপস্থিত—যা অনেকের কাছে ইতিহাসকে আংশিকভাবে উপস্থাপনের শামিল।
✅ বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন—
“১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। ভারত ছিল কেবল মিত্র—এর বেশি কিছু নয়।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের অবদান ও আত্মত্যাগকে উপেক্ষা করেছেন।
✅ ইতিহাস কী বলে
• ১৯৭১ সালের যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
• ভারত যুদ্ধের শেষ দিকে যুক্ত হয় এবং মিত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
• ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে আত্মসমর্পণ করে—ভারতে নয়।
• তাই দিনটি বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস এবং ভারতের বিজয় দিবস—দুটি ভিন্ন ঐতিহাসিক বাস্তবতা বহন করে।
✅ উপসংহার
মোদির পোস্টে বাংলাদেশের নাম না থাকা নিছক ভুল, নাকি কূটনৈতিক বার্তা—তা নিয়ে বিতর্ক চলছেই। তবে ইতিহাস বলছে, ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় প্রথমত বাংলাদেশের, এবং এই সত্য উপেক্ষা করা যায় না।

বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আপনার মতামত লিখুন