ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে ইবাদতের পাশাপাশি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক আচরণেও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কুরআন ও হাদিসে এমন কিছু বিষয়ের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো গোপন রাখা তাকওয়া, ইখলাস ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলেমদের ব্যাখ্যায় এসব গোপনীয়তা রক্ষা করাকে ঈমানের সৌন্দর্য হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। নিচে ইসলামে গোপন রাখার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশিত ৮টি বিষয় তুলে ধরা হলো—
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা উত্তম; আর যদি তা গোপনে দরিদ্রদের দাও, তবে সেটাই তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর।” (সূরা আল-বাকারা: ২৭১)
ইসলামি দৃষ্টিতে গোপনে দান করলে রিয়া বা লোক দেখানোর প্রবণতা থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সহজ হয়।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর সেই গোপন কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করে। (সহিহ মুসলিম: ১৪৩৭)
স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রকাশ করা ইসলামি শরিয়তে গুরুতর গুনাহ হিসেবে বিবেচিত।
হাদিসে বলা হয়েছে, কেউ ভালো স্বপ্ন দেখলে তা যেন কেবল প্রিয় ও বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছেই প্রকাশ করে। (সহিহ বুখারি: ৬৯৮৫)
ভালো স্বপ্নে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইঙ্গিত বা সুসংবাদ থাকতে পারে। সবার কাছে বললে হিংসা বা বদনজরের আশঙ্কা থাকে।
রাসুল ﷺ বলেছেন, কেউ একান্তে কথা বললে তা আমানত হিসেবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ: ৪৮৬৮)
অন্যের ব্যক্তিগত কথা প্রকাশ করা বিশ্বাসভঙ্গের শামিল।
নিজের আয়, সম্পদ বা আর্থিক অবস্থার বিস্তারিত অহেতুক প্রকাশ করতে ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছে। এতে অহংকার, হিংসা ও সামাজিক ফেতনা সৃষ্টি হতে পারে। হাদিসে এসেছে, “তোমরা তোমাদের প্রয়োজন গোপনে পূরণ করো; কারণ প্রত্যেক নিয়ামতের ওপর হিংসুক থাকে।” (তাবারানি)
রাসুল ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। (সহিহ মুসলিম: ২৫৯০)
সমাজে শান্তি ও পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে দোষ গোপন করার গুরুত্ব অপরিসীম।
ইখলাস বজায় রাখতে নফল ইবাদত ও দোয়া গোপনে করাই উত্তম। হাদিসে বলা হয়েছে, গোপনে করা দান ও ইবাদত প্রকাশ্যের তুলনায় অধিক মর্যাদাসম্পন্ন। (বায়হাকি)
ইসলামে জীবনের বড় পরিকল্পনা বা নতুন উদ্যোগ আগেভাগে প্রকাশ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা বা হিংসা সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে নবী ﷺ গোপনে প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করতে বলেছেন। (তাবারানি)
ইসলামে গোপনীয়তা কেবল ব্যক্তিগত বিষয় নয়; এটি ঈমান, আমানতদারি ও সামাজিক ভারসাম্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অপ্রয়োজনীয় প্রকাশ থেকে বিরত থাকা একজন সচেতন ও পরিপক্ব মুমিনের পরিচয়।

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

আপনার মতামত লিখুন