মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বহুল আলোচিত রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল ওয়ানএমডিবি (১এমডিবি)–সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ পাচারের দায়ে শুক্রবার তাকে আরও ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ হাজার ১৪০ কোটি মালয়েশীয় রিঙ্গিত (প্রায় ২৮০ কোটি মার্কিন ডলার) অর্থদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত।
পুত্রাজায়ার হাইকোর্টের বিচারক কলিন লরেন্স সেকুয়েরাহ রায় ঘোষণাকালে বলেন,
“প্রসিকিউশন পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে আসামির বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগটি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।”
এরপর তিনি নাজিবকে ওই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন।
আদালত সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ লুটপাটের ঘটনায় নাজিবের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের চারটি এবং অর্থ পাচারের ২১টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এসব অভিযোগে প্রায় ২২৮ কোটি মালয়েশীয় রিঙ্গিত (প্রায় ৫৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার) অর্থ সংশ্লিষ্ট ছিল।
এর আগে আলাদা একটি ১এমডিবি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে নাজিব বর্তমানে ছয় বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। বিচারক জানান, নতুন করে দেওয়া ১৫ বছরের সাজা আগের সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কার্যকর হবে।
রায় ঘোষণার সময় ৭২ বছর বয়সী নাজিব রাজাককে নীল স্যুট ও সাদা শার্ট পরা অবস্থায় আসনে হেলান দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রায় আট ঘণ্টার দীর্ঘ শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করা হয়।
আদালতে প্রসিকিউশন পক্ষ জানায়, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং ১এমডিবির উপদেষ্টা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নাজিব তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে তহবিলের অর্থ ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন। তদন্তকারীদের মতে, ওই অর্থ দিয়ে তিনি উচ্চমূল্যের সম্পত্তি, বিলাসবহুল ইয়ট এবং শিল্পী মোনে ও ভ্যান গঘের চিত্রকর্মসহ দামী শিল্পকর্ম কেনেন।
নাজিবের আইনজীবীরা দাবি করেন, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও পলাতক ব্যবসায়ী লো তায়েক জো (জো লো) তাকে প্রতারিত করেছিলেন। তবে বিচারক এই যুক্তি নাকচ করে বলেন, প্রমাণে স্পষ্ট যে জো লো ১এমডিবির কার্যক্রমে নাজিবের ‘প্রক্সি বা প্রতিনিধি’ হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি প্রতিরক্ষার যুক্তিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেন।
বিচারক মধ্যপ্রাচ্যের দাতাদের, এমনকি প্রয়াত সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর নাম যুক্ত করে অর্থপ্রবাহের ব্যাখ্যাকেও প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এসব দাবি “আরব্য রজনীর গল্পকেও ছাড়িয়ে যায়।”
নাজিবের আইনজীবী মুহাম্মদ শাফি আবদুল্লাহ জানান, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তার অভিযোগ, বিচারক রায় প্রদানে ‘গুরুতর ভুল’ করেছেন।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরপরই নাজিব রাজাক ১এমডিবি তহবিল চালু করেন। অভিযোগ রয়েছে, আনুষ্ঠানিক কোনো পদ না থাকলেও জো লো তহবিল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং আর্থিক সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করেন। ধারণা করা হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১এমডিবি থেকে ৪৫০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। পলাতক জো লো এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।
মালয়েশিয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতার পুত্র নাজিব রাজাক দুর্নীতি কেলেঙ্কারির জেরে ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতা হারান। এরপর থেকে তার এবং তার স্ত্রী রসমাহ মানসুরের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা হয়।
নাজিব দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, তার মেয়াদে ১এমডিবি কেলেঙ্কারি ঘটতে দেওয়ার জন্য তিনি অনুতপ্ত। তবে তিনি বরাবরই ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আপনার মতামত লিখুন