গনবার্তা

রেস্টুরেন্টে আদব–কেতা

ভদ্রতার ছোট ছোট নিয়মেই বড়ো সৌন্দর্য

ভদ্রতার ছোট ছোট নিয়মেই বড়ো সৌন্দর্য

আজকাল বাইরে খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে অনেক। পরিবার–বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা, ব্যবসায়িক মিটিং, অথবা ব্যস্ত জীবনে একটু স্বস্তির জন্য—সব জায়গাতেই রেস্টুরেন্ট একটি সাধারণ গন্তব্য। কিন্তু খাবারের স্বাদ যতটা জরুরি, তার চেয়ে কম নয় আচরণের সৌন্দর্য। কারণ রেস্টুরেন্ট শুধু খাওয়ার জায়গা নয়, এটি সবার জন্য একটি সম্মিলিত সামাজিক পরিবেশ।

চলুন জেনে নেওয়া যাক রেস্টুরেন্টে কোন কোন আদব–কেতা আমাদের আচরণকে আরও সুন্দর ও মার্জিত করতে পারে—


প্রবেশে প্রথম ছাপ

রেস্টুরেন্টে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আচরণের প্রথম ছবি তৈরি হয়। নীরবে দরজা খোলা, অন্য অতিথিদের দিকে খেয়াল রাখা এবং হোস্ট বা স্টাফদের বিনীত অভিবাদন—এই ছোট ছোট বিষয়গুলোই ভদ্রতার পরিচয় দেয়। ভিড় থাকলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ।


আসনে বসা ও অর্ডার দেওয়ার শিষ্টাচার

বসে যাওয়ার পরপরই মেন্যু হাতে পাওয়া যায়। অনেকেই তাড়াহুড়ো করেন, আবার কেউ কেউ দীর্ঘ সময় নিয়ে অন্যদের অপেক্ষায় রাখেন। সবচেয়ে ভালো হয়, মেন্যু দ্রুত দেখে শান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া। ওয়েটারের সঙ্গে কথা বলার সময় বিনীত ভাষা ব্যবহার—“দয়া করে”, “ধন্যবাদ”—রেস্টুরেন্ট সংস্কৃতির একটি নরম সৌন্দর্য।

খাবারে বিশেষ চাহিদা থাকলে যেমন—ঝাল কম, লবণ কম, তেল কম—আগেই জানানো উচিত।


টেবিল ম্যানারস: ছোটখাটো নিয়মেই মার্জিততা

খাওয়ার সময় কাঁটা–চামচের সঠিক ব্যবহার সভ্যতার সূক্ষ্ম পরিচয় দেয়। মুখ ভরে কথা বলা বা টেবিলে খাবার ছড়িয়ে ফেলা অবশ্যই এড়িয়ে চলার মতো অভ্যাস। যারা পরিবারসহ খান, বিশেষ করে শিশু থাকলে, তাদের দেখভাল করাও প্রাপ্তবয়স্কদের দায়িত্ব।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—অপর টেবিলের দিকে অতিরিক্ত তাকানো, অন্যের কথা শোনা বা তাদের কর্মকাণ্ডে মন্তব্য করা—এগুলো সামাজিকভাবে অশোভন।


রেস্টুরেন্টে শব্দ কমানো জরুরি কেন?

আমাদের দেশে রেস্টুরেন্ট মানেই অনেক সময় উচ্চস্বরে আড্ডা। কিন্তু এটি অন্য অতিথিদের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে। রেস্টুরেন্ট হলো একটি শেয়ার করা পরিবেশ—সবার স্বাচ্ছন্দ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া ভদ্রতারই অংশ।

ফোন সাইলেন্টে রাখা, লাউডস্পিকার ব্যবহার না করা এবং ভিডিও না চালানো—এসব নিয়ম মানলে পরিবেশ অনেক বেশি অতিথিবান্ধব থাকে।


ওয়েটার ও স্টাফদের প্রতি সম্মান

রেস্টুরেন্ট স্টাফদের প্রতি আচরণই একটি ব্যক্তির ভদ্রতার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। তারা আমাদের সেবা দিচ্ছেন—বশ্যতা নয়, বরং দায়িত্ব হিসেবে। তাই তাদের প্রতি ধৈর্যশীল, নম্র ও কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।

ব্যস্ত সময়ে খাবার পরিবেশনে বিলম্ব হলে রাগ না করে ভদ্রভাবে অনুরোধ জানানোই সঠিক আচরণ।

টিপস দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে অনেক জায়গায় এটি ভালো আচরণের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।


খাওয়া শেষে টেবিল ছেড়ে যাওয়ার শিষ্টাচার

খাওয়া শেষ করে টেবিল সম্পূর্ণ অগোছালো রেখে চলে যাওয়া সুন্দর নয়। প্লেট এক পাশে রাখা, টিস্যু গুছিয়ে রাখা এবং চেয়ার ঠিক করে ওঠা—এসব ছোট আচরণও দায়িত্ববোধের পরিচয় দেয়।


রেস্টুরেন্ট আমাদের সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি

এক একটি রেস্টুরেন্টে আমাদের আচরণ দেখে বোঝা যায় আমরা কেমন মানুষ এবং কী ধরনের সমাজ গড়তে চাই। বিদেশে গেলে আমরা এসব নিয়ম মেনে চলি, কিন্তু দেশেই নিজেদের নিয়ম ভুলে যাই—এ আচরণ বদলানো জরুরি।

রেস্টুরেন্টের আদব–কেতা শুধু সৌজন্য নয়, এটি এক ধরনের সামাজিক শিক্ষাও বটে। পরিবার, সন্তান, বন্ধু—যাঁরা সঙ্গে থাকেন তাঁদেরও এই অভ্যাস শেখানো উচিত।


শেষ কথা

রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া শুধু খাবার নয়—এটি একটি অভিজ্ঞতা। আর সেই অভিজ্ঞতাকে সুন্দর, মার্জিত ও উপভোগ্য করে তুলতে প্রয়োজন আচরণের সঠিকতা।

ভদ্রতা, সম্মান ও দায়িত্ব—এই তিনটি গুণই রেস্টুরেন্ট সংস্কৃতিকে পরিপূর্ণ করে।

আপনার মতামত লিখুন

গনবার্তা

মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫


ভদ্রতার ছোট ছোট নিয়মেই বড়ো সৌন্দর্য

প্রকাশের তারিখ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫

featured Image
আজকাল বাইরে খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে অনেক। পরিবার–বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা, ব্যবসায়িক মিটিং, অথবা ব্যস্ত জীবনে একটু স্বস্তির জন্য—সব জায়গাতেই রেস্টুরেন্ট একটি সাধারণ গন্তব্য। কিন্তু খাবারের স্বাদ যতটা জরুরি, তার চেয়ে কম নয় আচরণের সৌন্দর্য। কারণ রেস্টুরেন্ট শুধু খাওয়ার জায়গা নয়, এটি সবার জন্য একটি সম্মিলিত সামাজিক পরিবেশ।চলুন জেনে নেওয়া যাক রেস্টুরেন্টে কোন কোন আদব–কেতা আমাদের আচরণকে আরও সুন্দর ও মার্জিত করতে পারে—প্রবেশে প্রথম ছাপরেস্টুরেন্টে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আচরণের প্রথম ছবি তৈরি হয়। নীরবে দরজা খোলা, অন্য অতিথিদের দিকে খেয়াল রাখা এবং হোস্ট বা স্টাফদের বিনীত অভিবাদন—এই ছোট ছোট বিষয়গুলোই ভদ্রতার পরিচয় দেয়। ভিড় থাকলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ।আসনে বসা ও অর্ডার দেওয়ার শিষ্টাচারবসে যাওয়ার পরপরই মেন্যু হাতে পাওয়া যায়। অনেকেই তাড়াহুড়ো করেন, আবার কেউ কেউ দীর্ঘ সময় নিয়ে অন্যদের অপেক্ষায় রাখেন। সবচেয়ে ভালো হয়, মেন্যু দ্রুত দেখে শান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া। ওয়েটারের সঙ্গে কথা বলার সময় বিনীত ভাষা ব্যবহার—“দয়া করে”, “ধন্যবাদ”—রেস্টুরেন্ট সংস্কৃতির একটি নরম সৌন্দর্য।খাবারে বিশেষ চাহিদা থাকলে যেমন—ঝাল কম, লবণ কম, তেল কম—আগেই জানানো উচিত।টেবিল ম্যানারস: ছোটখাটো নিয়মেই মার্জিততাখাওয়ার সময় কাঁটা–চামচের সঠিক ব্যবহার সভ্যতার সূক্ষ্ম পরিচয় দেয়। মুখ ভরে কথা বলা বা টেবিলে খাবার ছড়িয়ে ফেলা অবশ্যই এড়িয়ে চলার মতো অভ্যাস। যারা পরিবারসহ খান, বিশেষ করে শিশু থাকলে, তাদের দেখভাল করাও প্রাপ্তবয়স্কদের দায়িত্ব।একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—অপর টেবিলের দিকে অতিরিক্ত তাকানো, অন্যের কথা শোনা বা তাদের কর্মকাণ্ডে মন্তব্য করা—এগুলো সামাজিকভাবে অশোভন।রেস্টুরেন্টে শব্দ কমানো জরুরি কেন?আমাদের দেশে রেস্টুরেন্ট মানেই অনেক সময় উচ্চস্বরে আড্ডা। কিন্তু এটি অন্য অতিথিদের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে। রেস্টুরেন্ট হলো একটি শেয়ার করা পরিবেশ—সবার স্বাচ্ছন্দ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া ভদ্রতারই অংশ।ফোন সাইলেন্টে রাখা, লাউডস্পিকার ব্যবহার না করা এবং ভিডিও না চালানো—এসব নিয়ম মানলে পরিবেশ অনেক বেশি অতিথিবান্ধব থাকে।ওয়েটার ও স্টাফদের প্রতি সম্মানরেস্টুরেন্ট স্টাফদের প্রতি আচরণই একটি ব্যক্তির ভদ্রতার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। তারা আমাদের সেবা দিচ্ছেন—বশ্যতা নয়, বরং দায়িত্ব হিসেবে। তাই তাদের প্রতি ধৈর্যশীল, নম্র ও কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।ব্যস্ত সময়ে খাবার পরিবেশনে বিলম্ব হলে রাগ না করে ভদ্রভাবে অনুরোধ জানানোই সঠিক আচরণ।টিপস দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে অনেক জায়গায় এটি ভালো আচরণের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।খাওয়া শেষে টেবিল ছেড়ে যাওয়ার শিষ্টাচারখাওয়া শেষ করে টেবিল সম্পূর্ণ অগোছালো রেখে চলে যাওয়া সুন্দর নয়। প্লেট এক পাশে রাখা, টিস্যু গুছিয়ে রাখা এবং চেয়ার ঠিক করে ওঠা—এসব ছোট আচরণও দায়িত্ববোধের পরিচয় দেয়।রেস্টুরেন্ট আমাদের সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবিএক একটি রেস্টুরেন্টে আমাদের আচরণ দেখে বোঝা যায় আমরা কেমন মানুষ এবং কী ধরনের সমাজ গড়তে চাই। বিদেশে গেলে আমরা এসব নিয়ম মেনে চলি, কিন্তু দেশেই নিজেদের নিয়ম ভুলে যাই—এ আচরণ বদলানো জরুরি।রেস্টুরেন্টের আদব–কেতা শুধু সৌজন্য নয়, এটি এক ধরনের সামাজিক শিক্ষাও বটে। পরিবার, সন্তান, বন্ধু—যাঁরা সঙ্গে থাকেন তাঁদেরও এই অভ্যাস শেখানো উচিত।শেষ কথারেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া শুধু খাবার নয়—এটি একটি অভিজ্ঞতা। আর সেই অভিজ্ঞতাকে সুন্দর, মার্জিত ও উপভোগ্য করে তুলতে প্রয়োজন আচরণের সঠিকতা।ভদ্রতা, সম্মান ও দায়িত্ব—এই তিনটি গুণই রেস্টুরেন্ট সংস্কৃতিকে পরিপূর্ণ করে।

গনবার্তা

সম্পাদকঃ নূর মোহাম্মদ 
প্রকাশকঃ ফিরোজ আল-মামুন 

কপিরাইট © ২০২৫ সর্বস্ব সংরক্ষিত গনবার্তা