গনবার্তা

রাজউক গবেষণা

ঢাকায় সাড়ে ৮ লাখের বেশি ভবন ধসে পড়তে পারে

ঢাকায় সাড়ে ৮ লাখের বেশি ভবন ধসে পড়তে পারে

নরসিংদীর মধুপুর ফল্টে যদি ৬ দশমিক ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, তাহলে রাজধানী ঢাকায় সাড়ে ৮ লাখের বেশি ভবন ধসে পড়তে পারে এবং কমপক্ষে দুই লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে—রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সর্বশেষ গবেষণায় এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়, দিনের বেলায় এমন ভূমিকম্প হলে ধসে পড়বে প্রায় ৮ লাখ ৬৫ হাজার ভবন। মানবিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতি ছাড়িয়ে যাবে ২৫ বিলিয়ন ডলার। সিলেট ফল্টে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতি করতে পারে, তবে ঢাকার সর্বোচ্চ ঝুঁকি মধুপুর ফল্টকেই ঘিরে।

গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে আবারও ঢাকার দুর্বলতা স্পষ্ট হয়। ৬ মাত্রারও কম কম্পনে রাজধানীর বহু ভবন দীর্ঘসময় দুলতে থাকে। দেশব্যাপী অন্তত ১০ জন প্রাণ হারান, আতঙ্কে ভবন ছেড়ে বাইরে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ।

সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ভূমিকম্প প্রস্তুতিমূলক আলোচনায় রাজউকের এই গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। বক্তারা বলেন, ঢাকার অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন, ভবন নির্মাণে দুর্বল তদারকি এবং দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতির কারণে যেকোনো বড় ভূমিকম্পে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। রাজউকের কাছে সে সক্ষমতা পর্যাপ্ত নয়। শুধু যন্ত্রপাতি দিলেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তৃতীয় পক্ষকে যুক্ত করে ভবনের প্রতিটি তলার সার্ভে করা এবং তা বিশ্লেষণ করে ভবনগুলোকে সার্টিফিকেট প্রদান করাই এখন প্রয়োজন।

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বড় বিপর্যয়ের যে বার্তা আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি, তার পর আর দেরি করার সুযোগ নেই। ভবন নিরীক্ষায় রাজউকের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে পুরান ঢাকার সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত পুনরায় শুরু করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ সব সেবা সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রতিটি এলাকায় কোথায় গ্যাসের লাইন বন্ধ করা হবে, কোথায় জরুরি স্বেচ্ছাসেবী থাকবে—এসব বিষয় এখনই নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানান, সরকার সমন্বিত উদ্যোগে ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করছে। মানুষের প্রস্তুতি, সরকারি সংস্থাগুলোর পারস্পরিক সমন্বয় এবং দুর্যোগ–পরবর্তী উদ্যোগগুলোকে শক্তিশালী করাই মূল লক্ষ্য। তার মতে, সঠিক প্রস্তুতি থাকলে দেশ যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।

আলোচনায় রাজউক চেয়ারম্যান জানান, ঢাকার ভবনগুলোকে নিরাপদ করতে নতুন একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের কাজ চলছে। এই সংস্থা ভবন অনুমোদন, নির্মাণ মনিটরিং এবং কাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজউকের গবেষণা ও সাম্প্রতিক ভূমিকম্প পরিস্থিতি স্পষ্ট করে জানাচ্ছে—ঢাকা এখন বড় ধরনের ভূমিকম্পের সামনে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। ভবন নিরীক্ষা, পুরান ঢাকা পুনর্গঠন, জরুরি সেবা সমন্বয় এবং প্রস্তুতি জোরদার না হলে একটি বড় ভূমিকম্প রাজধানীকে ইতিহাসের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের শহরে পরিণত করতে পারে।

আপনার মতামত লিখুন

গনবার্তা

মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫


ঢাকায় সাড়ে ৮ লাখের বেশি ভবন ধসে পড়তে পারে

প্রকাশের তারিখ : ২৫ নভেম্বর ২০২৫

featured Image
নরসিংদীর মধুপুর ফল্টে যদি ৬ দশমিক ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, তাহলে রাজধানী ঢাকায় সাড়ে ৮ লাখের বেশি ভবন ধসে পড়তে পারে এবং কমপক্ষে দুই লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে—রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সর্বশেষ গবেষণায় এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়, দিনের বেলায় এমন ভূমিকম্প হলে ধসে পড়বে প্রায় ৮ লাখ ৬৫ হাজার ভবন। মানবিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতি ছাড়িয়ে যাবে ২৫ বিলিয়ন ডলার। সিলেট ফল্টে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতি করতে পারে, তবে ঢাকার সর্বোচ্চ ঝুঁকি মধুপুর ফল্টকেই ঘিরে।গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে আবারও ঢাকার দুর্বলতা স্পষ্ট হয়। ৬ মাত্রারও কম কম্পনে রাজধানীর বহু ভবন দীর্ঘসময় দুলতে থাকে। দেশব্যাপী অন্তত ১০ জন প্রাণ হারান, আতঙ্কে ভবন ছেড়ে বাইরে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ।সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ভূমিকম্প প্রস্তুতিমূলক আলোচনায় রাজউকের এই গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। বক্তারা বলেন, ঢাকার অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন, ভবন নির্মাণে দুর্বল তদারকি এবং দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতির কারণে যেকোনো বড় ভূমিকম্পে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। রাজউকের কাছে সে সক্ষমতা পর্যাপ্ত নয়। শুধু যন্ত্রপাতি দিলেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তৃতীয় পক্ষকে যুক্ত করে ভবনের প্রতিটি তলার সার্ভে করা এবং তা বিশ্লেষণ করে ভবনগুলোকে সার্টিফিকেট প্রদান করাই এখন প্রয়োজন।পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বড় বিপর্যয়ের যে বার্তা আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি, তার পর আর দেরি করার সুযোগ নেই। ভবন নিরীক্ষায় রাজউকের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে পুরান ঢাকার সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত পুনরায় শুরু করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎসহ সব সেবা সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রতিটি এলাকায় কোথায় গ্যাসের লাইন বন্ধ করা হবে, কোথায় জরুরি স্বেচ্ছাসেবী থাকবে—এসব বিষয় এখনই নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানান, সরকার সমন্বিত উদ্যোগে ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করছে। মানুষের প্রস্তুতি, সরকারি সংস্থাগুলোর পারস্পরিক সমন্বয় এবং দুর্যোগ–পরবর্তী উদ্যোগগুলোকে শক্তিশালী করাই মূল লক্ষ্য। তার মতে, সঠিক প্রস্তুতি থাকলে দেশ যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।আলোচনায় রাজউক চেয়ারম্যান জানান, ঢাকার ভবনগুলোকে নিরাপদ করতে নতুন একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের কাজ চলছে। এই সংস্থা ভবন অনুমোদন, নির্মাণ মনিটরিং এবং কাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজউকের গবেষণা ও সাম্প্রতিক ভূমিকম্প পরিস্থিতি স্পষ্ট করে জানাচ্ছে—ঢাকা এখন বড় ধরনের ভূমিকম্পের সামনে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। ভবন নিরীক্ষা, পুরান ঢাকা পুনর্গঠন, জরুরি সেবা সমন্বয় এবং প্রস্তুতি জোরদার না হলে একটি বড় ভূমিকম্প রাজধানীকে ইতিহাসের ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের শহরে পরিণত করতে পারে।

গনবার্তা

সম্পাদকঃ নূর মোহাম্মদ 
প্রকাশকঃ ফিরোজ আল-মামুন 

কপিরাইট © ২০২৫ সর্বস্ব সংরক্ষিত গনবার্তা