দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণভোট অধ্যাদেশ–২০২৫’ জারি করেছেন। মঙ্গলবার রাতে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে এর গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর মাধ্যমে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গেই গণভোট আয়োজনের বিষয়টি চূড়ান্ত হলো।
এর আগে একই দিন সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। এরপরই দ্রুত গেজেট জারি করা হয়।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করা হবে একটি প্রধান প্রশ্ন-
আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ–২০২৫ এবং সনদে উল্লিখিত সাংবিধানিক সংস্কারসমূহে সম্মতি দিচ্ছেন? (হ্যাঁ/না)
এই এক প্রশ্নের অধীনে চারটি মূল প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জুলাই সনদে উল্লিখিত কাঠামো অনুসারে-
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার,
নির্বাচন কমিশন,
এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান
নতুনভাবে গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এটি ভবিষ্যৎ নির্বাচনের স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা ও আস্থার ভিত্তি গড়ে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অধ্যাদেশের আলোচিত অংশ হলো, বাংলাদেশের সংসদব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে প্রস্তাবিত দুই কক্ষা ব্যবস্থা।
এতে বলা হয়েছে-
জাতীয় সংসদের পাশাপাশি ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে।
রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে মোট যে ভোট পাবে, সেই অনুপাতে সদস্য নির্ধারণ হবে।
ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বাধ্যতামূলক হবে।
এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নীতিনির্ধারণ ও ক্ষমতার ভারসাম্য নতুন মাত্রা পাবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে গৃহীত ৩০টি সংস্কার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-
নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি
বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন
সংসদীয় কমিটির নেতৃত্ব বণ্টনে পরিবর্তন
মৌলিক অধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুদৃঢ় করা
স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করা
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার কাঠামো পুনর্গঠন
জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য সংস্কারসমূহ সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতির আলোকে পর্যায়ক্রমে কার্যকর করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে-
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত সব ভোটকেন্দ্রেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা গণভোট পরিচালনার দায়িত্বও পালন করবেন।
এই ঘোষণা কার্যত নিশ্চিত করেছে যে দেশের জনগণ একই দিনেই ভোট দেবেন:
একদিকে সংসদ নির্বাচনে, অন্যদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থার কাঠামো পুনর্গঠনের প্রশ্নে।
গণভোটকে ঘিরে এখন দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা ও আগ্রহ উভয়ই বাড়ছে। অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচিত হলো।

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫

আপনার মতামত লিখুন