গনবার্তা

রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে গেজেট প্রকাশ—দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, তত্ত্বাবধায়ক কাঠামো ও ৩০ দফা সংস্কারে দেশের জনগণই দেবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

‘গণভোট অধ্যাদেশ–২০২৫’ জারি: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গেই হবে গণভোট, চারটি বড় সাংবিধানিক প্রস্তাব জনতার রায়ে নির্ধারিত হবে

‘গণভোট অধ্যাদেশ–২০২৫’ জারি: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গেই হবে গণভোট, চারটি বড় সাংবিধানিক প্রস্তাব জনতার রায়ে নির্ধারিত হবে

দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণভোট অধ্যাদেশ–২০২৫’ জারি করেছেন। মঙ্গলবার রাতে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে এর গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর মাধ্যমে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গেই গণভোট আয়োজনের বিষয়টি চূড়ান্ত হলো।

এর আগে একই দিন সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। এরপরই দ্রুত গেজেট জারি করা হয়।

গণভোটে থাকবে একটি কেন্দ্রীয় প্রশ্ন

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করা হবে একটি প্রধান প্রশ্ন-

আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ–২০২৫ এবং সনদে উল্লিখিত সাংবিধানিক সংস্কারসমূহে সম্মতি দিচ্ছেন? (হ্যাঁ/না)

এই এক প্রশ্নের অধীনে চারটি মূল প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

১) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন

জুলাই সনদে উল্লিখিত কাঠামো অনুসারে-

  • নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার,

  • নির্বাচন কমিশন,

  • এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান
    নতুনভাবে গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এটি ভবিষ্যৎ নির্বাচনের স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা ও আস্থার ভিত্তি গড়ে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

২) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন

অধ্যাদেশের আলোচিত অংশ হলো, বাংলাদেশের সংসদব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে প্রস্তাবিত দুই কক্ষা ব্যবস্থা।

এতে বলা হয়েছে-

  • জাতীয় সংসদের পাশাপাশি ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে।

  • রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে মোট যে ভোট পাবে, সেই অনুপাতে সদস্য নির্ধারণ হবে।

  • ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বাধ্যতামূলক হবে।

এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নীতিনির্ধারণ ও ক্ষমতার ভারসাম্য নতুন মাত্রা পাবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

৩) ৩০টি বিষয়ে বাধ্যতামূলক সংস্কার বাস্তবায়ন

জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে গৃহীত ৩০টি সংস্কার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি

  • বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন

  • সংসদীয় কমিটির নেতৃত্ব বণ্টনে পরিবর্তন

  • মৌলিক অধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুদৃঢ় করা

  • স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করা

  • রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার কাঠামো পুনর্গঠন

৪) অন্যান্য সংস্কার দলগুলোর অঙ্গীকার অনুযায়ী বাস্তবায়ন

জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য সংস্কারসমূহ সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতির আলোকে পর্যায়ক্রমে কার্যকর করার সুযোগ রাখা হয়েছে।


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে গণভোট

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে-

  • ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত সব ভোটকেন্দ্রেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।

  • নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা গণভোট পরিচালনার দায়িত্বও পালন করবেন।

এই ঘোষণা কার্যত নিশ্চিত করেছে যে দেশের জনগণ একই দিনেই ভোট দেবেন:
একদিকে সংসদ নির্বাচনে, অন্যদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থার কাঠামো পুনর্গঠনের প্রশ্নে।

গণভোটকে ঘিরে এখন দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা ও আগ্রহ উভয়ই বাড়ছে। অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচিত হলো।

আপনার মতামত লিখুন

গনবার্তা

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫


‘গণভোট অধ্যাদেশ–২০২৫’ জারি: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গেই হবে গণভোট, চারটি বড় সাংবিধানিক প্রস্তাব জনতার রায়ে নির্ধারিত হবে

প্রকাশের তারিখ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫

featured Image
দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণভোট অধ্যাদেশ–২০২৫’ জারি করেছেন। মঙ্গলবার রাতে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে এর গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর মাধ্যমে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গেই গণভোট আয়োজনের বিষয়টি চূড়ান্ত হলো।এর আগে একই দিন সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। এরপরই দ্রুত গেজেট জারি করা হয়।গণভোটে থাকবে একটি কেন্দ্রীয় প্রশ্নঅধ্যাদেশ অনুযায়ী, ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করা হবে একটি প্রধান প্রশ্ন-আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ–২০২৫ এবং সনদে উল্লিখিত সাংবিধানিক সংস্কারসমূহে সম্মতি দিচ্ছেন? (হ্যাঁ/না)এই এক প্রশ্নের অধীনে চারটি মূল প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।১) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনজুলাই সনদে উল্লিখিত কাঠামো অনুসারে- নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন, এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নতুনভাবে গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এটি ভবিষ্যৎ নির্বাচনের স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা ও আস্থার ভিত্তি গড়ে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।২) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনঅধ্যাদেশের আলোচিত অংশ হলো, বাংলাদেশের সংসদব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে প্রস্তাবিত দুই কক্ষা ব্যবস্থা।এতে বলা হয়েছে- জাতীয় সংসদের পাশাপাশি ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে মোট যে ভোট পাবে, সেই অনুপাতে সদস্য নির্ধারণ হবে। ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বাধ্যতামূলক হবে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নীতিনির্ধারণ ও ক্ষমতার ভারসাম্য নতুন মাত্রা পাবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।৩) ৩০টি বিষয়ে বাধ্যতামূলক সংস্কার বাস্তবায়নজুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে গৃহীত ৩০টি সংস্কার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন সংসদীয় কমিটির নেতৃত্ব বণ্টনে পরিবর্তন মৌলিক অধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুদৃঢ় করা স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার কাঠামো পুনর্গঠন ৪) অন্যান্য সংস্কার দলগুলোর অঙ্গীকার অনুযায়ী বাস্তবায়নজুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য সংস্কারসমূহ সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতির আলোকে পর্যায়ক্রমে কার্যকর করার সুযোগ রাখা হয়েছে।ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে গণভোটঅধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে- ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত সব ভোটকেন্দ্রেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা গণভোট পরিচালনার দায়িত্বও পালন করবেন। এই ঘোষণা কার্যত নিশ্চিত করেছে যে দেশের জনগণ একই দিনেই ভোট দেবেন: একদিকে সংসদ নির্বাচনে, অন্যদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থার কাঠামো পুনর্গঠনের প্রশ্নে। গণভোটকে ঘিরে এখন দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা ও আগ্রহ উভয়ই বাড়ছে। অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচিত হলো।

গনবার্তা

সম্পাদকঃ নূর মোহাম্মদ 
প্রকাশকঃ ফিরোজ আল-মামুন 

কপিরাইট © ২০২৫ সর্বস্ব সংরক্ষিত গনবার্তা