মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বুধবার (২৬ নভেম্বর) প্রকাশিত এই রায়কে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
আইন অনুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই ৩০ দিনের আপিলের সময় গণনা শুরু হয়। এর অর্থ—
✔ আসামিরা এখন আপিল করতে পারবেন
✔ রাষ্ট্রপক্ষও প্রয়োজনে আপিল বা রিভিউয়ের সুযোগ পাবে
✔ আপিল বিভাগে শুনানি না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর হবে না দণ্ড
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের মাধ্যমে মামলাটি এখন নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করলো।
১৭ নভেম্বর দেওয়া সংক্ষিপ্ত রায়ে বলা হয়েছিল—
দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড,
একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড,
একটি অভিযোগে আসাদুজ্জামান কামালকে মৃত্যুদণ্ড,
পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রমাণিত হয়েছে—
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, নির্যাতন, হত্যা এবং সংগঠিত তৎপরতার সঙ্গে আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসূত্র ছিল।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করে—
অপরাধগুলো ছিল সংগঠিত, পরিকল্পিত ও রাষ্ট্রবিরোধী।
রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তারা ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে অপরাধকে উৎসাহিত করেছিলেন।
সাক্ষ্য-প্রমাণ, নথি ও আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগে আসামিদের দায় সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক উত্তেজনা ও ভিন্নমত দেখা দিয়েছে।
সরকারপক্ষ বলছে—
“অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রায় দেওয়া হয়েছে—এটি আইনের শাসনের বিজয়।”
বিরোধী দলের দাবি—
“এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিন্নমত দমনের এক প্রক্রিয়া। তারা দ্রুত আপিল প্রক্রিয়ায় যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের রাজনীতি এখন আরও উত্তপ্ত হবে এবং আপিল শুনানি জাতীয় আলোচ্যসূচির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
আইনজীবীরা মনে করছেন—
আপিল বিভাগে এই মামলা দীর্ঘ শুনানি হতে পারে
আসামিপক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আইনজীবীদের সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে
রাষ্ট্রপক্ষও শক্তিশালী আইন টিম গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে
আদালত আপিল শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করলে মামলার ভবিষ্যৎ দিক স্পষ্ট হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রায় প্রকাশের পরই তীব্র আলোচনা শুরু হয়।
এক পক্ষ বলছে, “বিচার পেয়েছে শহীদ পরিবারগুলো।”
অন্য পক্ষ বলছে, “রায় রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত।”
সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন—
“এই রায়ের ফলে দেশের রাজনৈতিক বিভাজন আরও জটিল হবে, তবে আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলা যাবে না।”
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের মধ্য দিয়ে বহু আলোচিত এই মামলার আইনি যাত্রা নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করল।
এখন সবার দৃষ্টি— আপিল বিভাগ কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয়।

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫

আপনার মতামত লিখুন